পানসে লাগে
অপূর্ব শর্মা
পরিবর্তন কথাটি একসময় খুব প্রিয় ছিলো আমার
মিছিলে স্লোগানে, বক্তৃক্তা আর কবিতায় যখনই
কেউ পরিবর্তনের কথা বলতো- অদ্ভুত এক
ভালোলাগায় আন্দোলিত হতো আমার মনোভূমি
মন্ত্রমুগ্ধ হতাম দিন বদলের আশাজাগানিয়া কথায়
অথচ সেই কথাটি আজ বড্ডবেশি পানসে লাগে
যখনই কেউ এমন কথায় আবেশ ছড়াতে চায়
তখন ফেলে আসা দিনের স্মৃতি তাড়িত করে
কানে ভাসে করিম আলীর জ্বালাময়ী স্লোগান
শাসকের বুলেটে যেদিন রক্তাক্ত হলো করিম
সেদিনও মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে উচিয়ে
মানিনা মানবনা বলে গগনবিদারী স্লোগানে সে
প্রকম্পিত করেছে শহরের অলিগলি রাজপথ
করিমের মানা-না মানায় কিছুই বদলায় নি
শুধু পাল্টেছে সময়, বুড়িগঙ্গায় গড়িয়েছে
অনেক অনেক জল, শুধু থামেনি মায়ের আর্তি
আর থামেনি প্রিয়তমা স্ত্রীর বেদনা ধারা
কবিতা দিয়ে সময় বদলের চেষ্টার কোনও ত্রুটি
ছিলোনা সুবোদ স্বদেশীর, শব্দব্রহ্মের আঘাত
হানতে সে ছিলো দুর্নিবার, স্থানীয় দৈনিক আর
লিটল ম্যাগে ছাপা হতো তার প্রতিবাদী কবিতা
শহরের প্রায় সব অনুষ্ঠানে ছিলো ওর উপস্থিতি
তাঁর স্বরচিত পংক্তি শুনে বাহবা দিতেন অনেকেই
যে ডায়েরি থেকে কবিতাগুলো পাঠ করত সুবোধ
সেটি আজ পাঠের অনুপযুক্ত, ধরলেই ছিড়ে পাতা
বিবর্ন হয়ে যাওয়া পাঞ্জাবী আর ক্ষয় হতে হতে
ফুটো হয়ে যাওয়া সেন্ডেলের মতোই ধুকছে সে
অথচ থামেনি তাঁর আলোকিত ভোরের তালাশ
বশির মিয়ার জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে অসংখ্য তরুণ
লেখাপড়া ছেড়ে রাজনীতিতে লিখিয়েছিলো নাম
কারাবরণ আর নির্যাতনে তাদের অনেকেই
বিনষ্ট করেছে সমৃদ্ধ আগামীর কাঙ্খিত সোপান
কেউ কেউ হাসিমুখে করেছে মৃত্যুকে আলিঙ্গন
আবার কেউবা বুকের রক্তে রাঙিয়েছে রাজপথ
সেই বশির মিয়া আজ আর বশির মিয়া নেই
তার বাগ্মিতায় এখন আর আবিষ্ট হয়না কেউ
তাকে দেখলেই উপহাস করে চলে যায় মানুষ
মিছিলের মুখ করিম, প্রতিষ্ঠা না পাওয়া কবি
সুবোধ আর জ্বালাময়ি ভাষণের বশির মিয়া
পরিবর্তন চেয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকেই
কিন্তু সময় আর বিশ্বাসভঙ্গের যাতনায় তাদের
স্বপ্নেরা আজ আহত পাখির মতো উড়ে বেড়ায়
পরিবর্তন শব্দটিকে তাই আর ভালো লাগেনা
পানসে লাগে, বড় বেশি পানসে লাগে।