
আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা, বিচার ইত্যাদি নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোচনা আছে। ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধী-বিচারের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো নুরেমবার্গ ট্রায়াল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) শেষ হলে এই বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে প্রামাণ্য বইপত্তরও আছে, যেমন Robert Woetzel এর লেখা The Nuremberg Trials in International Law (1962) ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত হয়েছিল ওই আন্তর্জাতিক বিচারসভা: জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ কমিশন। এর কাজ শুরু হয় ১৯৪৪-এর ১১ জানুয়ারি আর শেষ হয় ১৯৪৮-এর ৩১ মার্চ।
মুক্তকক্ষে শুনানি হয়েছিল ৪০৩টি, নথি উপস্থাপিত চার হাজারটি আর বিচারকার্যের সাক্ষ্য-প্রমাণের সওয়াল-জবাব-দলিলাদি মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয় মোট ৪১ খণ্ডে। ওয়েটজেল সাহেব ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কোনো সরকারেরই তার নাগরিকদের সঙ্গে ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করার কোনো অধিকার নেই। তেমন ব্যবহার যত সামান্যই হোক, তা আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে আনার যোগ্য। প্রতিটি জাতির সরকারি কর্মকর্তাদের এখন থেকে সচেতন থাকতে হবে যে তাঁরা যদি জাতি সম্পৃক্ত আইন ( law of nations ) অমান্য করেন, যদি তাঁরা আগ্রাসী যুদ্ধের পাঁয়তারা করেন বা ঘটিয়ে তোলেন, যদি মনুষ্যত্ব বিধায়ক আইনের ( laws of humanity ) পরিপন্থী কোনো আইন তাঁরা প্রয়োগ করেন, অথবা তাঁরা যদি কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে, যাদের অধিকার চূড়ান্ত সভ্য নানা জাতি কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে নিগৃহীত করেন, তাহলে তাঁরাও আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। নুরেমবার্গের তাৎপর্য হলো এটাই।’
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেসব যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল, সে বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বই হচ্ছে ১৯৭২ সালে দিল্লির ওরিয়েন্ট পাবলিশার্স প্রকাশিত B. N. Mehrish রচিত War Crimes and Genocide : The Trial of Pakistani War Criminals।
উল্লেখযোগ্য বই আরও আছে। যেমন আবুল মাল আবদুল মুহিত ( A M A Muhith, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী) রচিত Bangladesh : Emergence of a Nation (১৯৭৮; দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ ১৯৯২)।
J N Dixit রচিত Liberation and Beyond : Indo-Bangladesh Relations (১৯৯৯) অত্যন্ত মূল্যবান বই। তিনি ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের লোক ছিলেন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাংগঠনিক পর্যায়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। যুদ্ধে জয়ী ও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভারতীয় দূতাবাস চালু করেন ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি। তাঁর প্রত্যক্ষ ও সংগৃহীত অভিজ্ঞতার তথ্যপ্রমাণাদির আলোকে তিনি বইটি লিখেছিলেন।
মুক্তকক্ষে শুনানি হয়েছিল ৪০৩টি, নথি উপস্থাপিত চার হাজারটি আর বিচারকার্যের সাক্ষ্য-প্রমাণের সওয়াল-জবাব-দলিলাদি মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয় মোট ৪১ খণ্ডে। ওয়েটজেল সাহেব ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কোনো সরকারেরই তার নাগরিকদের সঙ্গে ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করার কোনো অধিকার নেই। তেমন ব্যবহার যত সামান্যই হোক, তা আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে আনার যোগ্য। প্রতিটি জাতির সরকারি কর্মকর্তাদের এখন থেকে সচেতন থাকতে হবে যে তাঁরা যদি জাতি সম্পৃক্ত আইন ( law of nations ) অমান্য করেন, যদি তাঁরা আগ্রাসী যুদ্ধের পাঁয়তারা করেন বা ঘটিয়ে তোলেন, যদি মনুষ্যত্ব বিধায়ক আইনের ( laws of humanity ) পরিপন্থী কোনো আইন তাঁরা প্রয়োগ করেন, অথবা তাঁরা যদি কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে, যাদের অধিকার চূড়ান্ত সভ্য নানা জাতি কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে নিগৃহীত করেন, তাহলে তাঁরাও আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। নুরেমবার্গের তাৎপর্য হলো এটাই।’
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেসব যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল, সে বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বই হচ্ছে ১৯৭২ সালে দিল্লির ওরিয়েন্ট পাবলিশার্স প্রকাশিত B. N. Mehrish রচিত War Crimes and Genocide : The Trial of Pakistani War Criminals।
উল্লেখযোগ্য বই আরও আছে। যেমন আবুল মাল আবদুল মুহিত ( A M A Muhith, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী) রচিত Bangladesh : Emergence of a Nation (১৯৭৮; দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ ১৯৯২)।
J N Dixit রচিত Liberation and Beyond : Indo-Bangladesh Relations (১৯৯৯) অত্যন্ত মূল্যবান বই। তিনি ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের লোক ছিলেন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাংগঠনিক পর্যায়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। যুদ্ধে জয়ী ও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভারতীয় দূতাবাস চালু করেন ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি। তাঁর প্রত্যক্ষ ও সংগৃহীত অভিজ্ঞতার তথ্যপ্রমাণাদির আলোকে তিনি বইটি লিখেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ৪০ বছর হলো। যে বালক-বালিকার বয়স তখন পাঁচ বছর (মানুষের স্মৃতি সংরক্ষিত হতে থাকে মোটামুটি এ সময় থেকে), এখন সে পঁয়তাল্লিশের প্রৌঢ়। আজকের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তার জ্ঞান বইপত্তর পড়ে, লোকমুখে শুনে হয়েছে। তাই আবেগ বা অনুভবের কোনো ভূমিকা তার ক্ষেত্রে থাকার কথা নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অন্তর্গত, তাঁদের হাত থেকে যে পরিমাণ তথ্যসংবলিত লেখা প্রত্যাশিত ছিল, তা মেলেনি। অপূর্ব শর্মা রচিত সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র বইটি এ কারণে দামি ও প্রত্যাশা পূরণযোগ্য রচনা বলে মনে হলো। বিশেষভাবে চারটি পরিচ্ছেদ ঐতিহাসিক কারণে খুবই মূল্যবান: শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়া, আলবদর বাহিনী গঠনের পটভূমি, দালাল অধ্যাদেশ, বিচার ও বাস্তবতা এবং যেভাবে থমকে গেল বিচারপ্রক্রিয়া। আরেকটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজিত হলে ভালো হতো। সেটি এই রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময় হবু সদস্যকে ইংরেজিতে একটি শপথবাক্য পাঠ করতে হতো, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়: ‘আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আইনসংগত সকল হুকুম মান্য ও পালন করব, পাকিস্তানের সংবিধান যেভাবে আইনত প্রস্তুত হয়েছে তার প্রতি সত্যিকার আনুগত্য বজায় রাখব এবং পাকিস্তান রক্ষায় নিযুক্ত থাকব।’
লেখক বিস্তৃত পাঠকশ্রেণীর পক্ষ থেকে নিরঙ্কুশ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। নিজের প্রাণের তাগিদে প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় করে তিনি তথ্যসংগ্রহ করেছেন; এই ঐকান্তিকতার জন্য তাঁর ঋণ অপরিশোধ্য বলেই মনে করি।
বইটি যেন সবাই পড়েন, এই অনুরোধ না করে আমার উপায় নেই। কালি ও কলম পত্রিকা ২০১০ সালে বছরের সেরা বই হিসেবে যে চিহ্নিত করেছিল, তার সংগত কারণ আছে।
দৈনিক প্রথম আলো : ৮ জুলাই ২০১১