মুক্তিযুদ্ধের গান

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল সঙ্গীত। মুক্তিকামী মানুষের বিদ্রোহী সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে যুদ্ধদিনে সুর-তরঙ্গের ভূমিকা ছিলো অতূলনীয়। স্বাধীনবাংলা বেতারের সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা রীতিমত যুদ্ধ করেছেন অগ্নিগর্ভ সময়ে। বেতারে প্রচারিত দেশের গান শুধু যোদ্ধাদের মনোবল সঞ্চারেই সহায়ক হয়নি, বাংলাদেশের অবরুদ্ধ মানুষের মনে জাগিয়েছে আশার আলো, শরনার্থীদের যুগিয়েছে প্রেরণা।

২৫ মার্চের কালো রাতে ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে হায়নার দল। নির্বিচারে তারা হত্যা করে আবাল বৃদ্ধ বনিতাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন স্বাধীনতার। শুরু হলো যুদ্ধ, মুক্তির জন্য লড়াই। বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশ মাতৃকাকে বাঁচানোর সংগ্রাম। ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করতে শুরু করে বাঙালিরা। শ্রেনী ও পেশার ব্যবধান ভুলে এক কাতারে দাঁড়ায় মানুষ। শব্দ সৈনিকরাও দেশ মাতৃকাকে রক্ষার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন। কণ্ঠে ঝড় তুললেন শিল্পীরা। বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে, মনোজগতে আলোড়ন তুলতে এমন সব দেশের গান, মায়ের গান, প্রেরণার গান প্রচার হতে লাগলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে-যা মুক্তিপ্রত্যাশী বাঙালি জাতির চেতনাকে রীতিমত আলোড়িত করে রাখে যুদ্ধের পুরো ৯টি মাস। অসীম সাহস, অক্লান্ত পরিশ্রম আর দেশপ্রেমের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে একের পর এক কালজয়ী গান উপহার দিতে লাগলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পীরা। সঙ্গীত সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাৎক্ষণিক কিংবা স্বল্প সময়ে মুক্তিপাগল মানুষের প্রাণের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হতে লাগলো বানীবদ্ধ সুরে। বেতারের মাধ্যমে সুরের ভুবনের বাসিন্দারা জাগরিত করে তুললেন স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের। সেই জাগরণ, সেই অভিযাত্রা আন্দোলিত করলো মানুষের মনকে। সেই উন্মেষ আর পেছনে ফিরে আসতে দেয়নি আমাদের।   

     মুক্তিযুদ্ধের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে এই বেতার কেন্দ্রের অভিযাত্রা শুরু হয়। পুরো নয় মাস সচল ছিলো এই কেন্দ্রের কার্যক্রম। স্বাধীন বাংলা বেতারের সাথে যুক্ত ছিলেন শতাধিক শিল্পী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন- ‘সমর দাশ, মলয় ঘোষ দস্তিদার, হরলাল রায়, মোহাম্মদ আবদুল জব্বার, অজিত রায়, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, মান্না হক, এম এ মান্নান, শাহ আলী সরকার, সনজিদা খাতুন, সরদার আলাউদ্দীন আহমেদ, কল্যাণী ঘোষ, অনুপকুমার ভট্টাচার্য, মনজুর আহমদ, কাদেরী কিবরিয়া, সুবল দাশ, আবদুল গনি বোখারী, শাহীন মাহমুদ, অনিল চন্দ্র দে, অরূপ রতন চৌধুরী, মোশাদ আলী, শেফালী ঘোষ, হেনা বেগম, মফিজ আঙ্গুর, লাকী আখন্দ, স্বপনা রায়, মালা খান, রূপা খান, মাধুরী আচার্য, নমিতা ঘোষ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, আবু নওশের, রমা ভৌমিক, মনোয়ার হোসেন, কিশোর রায়, কামাল উদ্দীন, ইকবাল আহমদ, রঞ্জন ঘটক, মনোরঞ্জন ঘোষাল, তোরাব আলী শাহ, নায়লা জামান, বুলবুল মহলানবীশ, এম এ খালেক, মাকসুদ আলী সাঁই, ফকির আলমগীর, মনজুলা দাশগুপ্ত, সুব্রত সেনগুপ্ত, উমা চৌধুরী, মোশারফ হোসেন, ঝর্ণা ব্যানার্জী, দীপা ব্যানার্জী, সুকুমার বিশ্বাস, তরুণ রায়, প্রবাল চৌধুরী, রফিকুল আলম, কল্যাণী মিত্র, মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, লীনা দাশ, সাকিনা বেগম, রেজওয়ানুল হক, অনীতা বসু, মহিউদ্দীন খোকা, রিজিয়া সাইফুদ্দিন, রেহানা বেগম, মিহির নন্দী, অমিতাভ সেনগুপ্ত, ভক্তিরায়, অর্চনা বসু, মোস্তফা তানুজ, সাধন সরকার, মুজিবুর রহমান, মিনু রায়, রীতা চাটার্জী, শান্তি মুখার্জি, জীবনকৃষ্ণ দাশ, শিবশঙ্কর রায়, সৈয়দ আলমগীর, ভারতী ঘোষ, শেফালী সান্যাল, মদনমোহন দাশ, শহীদ হাসান, অরুনা সাহা, জয়ন্তী ভূঁইয়া, কুইন মহাজাবিন, মৃনাল ভট্টাচার্য, শাফাউন নবি, প্রদীপ ঘোষ, মিহির কর্মকার, শক্তিশিখা দাশ, মিহির লালা, গীতশ্রী সেন, গৌরাঙ্গ সরকার, প্রনব চন্দ্র ঘোষ, সাইদুর রহমান, কাঞ্চন তালুকদার, মুকুল চৌধুরী, মলিনা দাশ, জরিন আহমদ, ইন্দু বিকাশ রায়, বাসু দেব, পরিতোষ শীল, মিতালী মুখার্জি, মলয় কুমার গাঙ্গুলী, তপন ভট্টাচার্য (তপন মাহমুদ), শুক্তি মহলানবীশ, তিমির নন্দী, মামুনাল চৌধুরী, আফরোজা মামুন প্রমুখ।

যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সুজেয় শ্যাম, কালাচাদ ঘোঁষ, গোপী বল্লভ বিশ্বাস, হরেন্দ্রচন্দ্র লাহিড়ী, সুবল দত্ত, বাবুল দত্ত, অবিনাশ শীল, অরুণ গোস্বামী, সুনীল গোস্বামী, তড়িৎ হোসেন খান, দিলীপ দাশগুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, জুলু খান, রুমু খান, বাসুদেব দাশ, সমীর চন্দ্র, শতদল সেন’ প্রমুখ। উল্লেখিত কন্ঠশিল্পীরা কখনো সম্মিলিতভাবে, কখনো দ্বৈত কখনোবা একক সঙ্গিত পরিবেশন করে মুক্তিকামী বাঙালীর যুদ্ধজয়ে প্রেরণা যুগিয়েছেন। অসংখ্য গান বেজেছে স্বাধীন বাংলা বেতারে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ‘নোঙর তোলো তোলো’ ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা’ ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, শোনো একটি মুজিবরের থেকে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘দুর্গমগিরি’, ‘আমরা কববো জয়’, ‘বাধ ভেঙে দাও’, ‘সোনা সোনা সোনা’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘ছোটদের বড়দের সকলের’, ‘মাগো ভাবনা কেন’।

শিল্পীরা স্বতস্ফুর্তভাবেই এসব গেয়েছেন গান। দুঃসহ সময়ে যে একাগ্রতা দেখিয়েছেন সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা তা এক কথায় অভাবনীয়। মুহম্মদ সবুরের লেখায় উঠে এসেছে সেই সময়ের চিত্র। ‘‘একাত্তর সালের জুন মাসে গ্রামোফোন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান তৈরির জন্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের অনুরোধ জানায়। বাংলা গানের নামীদামী শিল্পী, সুরকার, গীতিকাররাও এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মীরাদেব বর্মন, সুবীর হাজরা, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল দত্ত, অমিতাভ নাহা, বিশ্বনাথ দাস, পবিত্র মিত্র প্রমুখ গীতিকার গান লিখেছেন। সুরকাররাও প্রাণবন্ত এবং আবেগপূর্ণ সুর করেছিলেন। এর মধ্যে শচীন দেববর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাহুল দেববর্মণ, বাপ্পী লাহিড়ী, অপরেশ লাহিড়ী, নীতা সেন, দীনেন্দ্র  চৌধুরী, অভিজিৎ, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখ সুর দিয়েছেন। আর এঁদের ছাপিয়ে যেন প্রজ্বলিত হয়েছিলেন যুদ্ধজয়ের গানে সলিল চৌধুরী। গণসঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় তিনি ছিলেন অন্যরকম দিশারী। গেয়েছেন কলকাতার প্রায় শিল্পীই। হেমন্ত, দ্বিজেন, শ্যামল, মানবেন্দ্র, সত্যব্রত দত্ত, ভূপেন হাজারিকা, বনশ্রী সেন গুপ্ত, নির্মলা মিশ্র, আশা ভোঁসলে, রাহুল দেববর্মণ, দেবব্রত বিশ্বাস, ললিতা ধর চৌধুরী, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, অংশুমান রায়, সুদ্বকাশ চাকী, নির্মলেন্দু চৌধুরী, মিন্টু দাশ গুপ্ত প্রমুখ গেয়েছেন। এছাড়া রবিশংকরও এইচএমভি থেকে কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের রেকর্ড করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ নামে।

একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও বেজেছে কোলকাতার শিল্পী অংশুমান রায়ের গাওয়া, ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোলকাতার শিল্পীদের প্রকাশিত গানের অন্যান্য রেকর্ড বাজানো হয়নি। স্বাধীন বাংলা বেতার  থেকে যেসব গ্রামোফোন রেকর্ড বাজানো হয়েছে, তা ঢাকায় উৎপাদিত ছিল। তবে কেবল বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে, শ্যামল গুপ্তের লেখা এবং আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘হাজার বছর পরে’ এবং ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম’ গান দুটি বাজানো হয়েছিল। যার প্রকাশক ছিলো এইচএমভি।

একাত্তরের জুলাই মাসে এইচএমভি থেকে গান রেকর্ড করার অনুমতি পেয়ে শিল্পী অংশুমান রায় শরণাপন্ন হলেন খ্যাতনামা গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের। তিনি ততোদিনে ‘মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি লিখে ফেলেছেন। বাংলাদেশের সুরকার সমর দাসের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গানটি রেকর্ডও করেন। অংশুমানের অনুরোধে গৌরীপ্রসন্ন লিখলেন বাঙালির সেই বিখ্যাত চিরসবুজ চিরঞ্জয়ী গান ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রণি।’’

স্বাধীন বাংলা বেতারের পাশাপাশি শিল্পীরা ভারতের শরণার্থী শিবিরে সঙ্গীত পরিবেশন করে দেশ ছেড়ে আসা মানুষকে উজ্জীবিত রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তারা শুধু দুর্দিনের অভিযাত্রীদের মনেই সাহস যোগাননি উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও বিভিন্ন ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে সঙ্গিত পরিবেশন করে। আবার অর্থ সাযায্যের জন্যও সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সঙ্গীত পরিবেশন করে তা থেকে যে অর্থ উপার্জিত হয়েছে তা তুলে দিয়েছেন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের হাতে। শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের ভাষ্য সেই সময়ের চিত্র ফুটে উঠেছে, ‘বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে, কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে, স্কুল কলেজের মিলনায়তনে এই ‘রূপান্তরের গান’ গীতি আলেখ্য কখনো আংশিক কখনো সম্পূর্ণভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। মানুষ মন্ত্রমুদ্ধের মতো শুনেছে এই গানগুলো। ‘ঢাকো রে মুখচন্দ্রমা’ সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে’, ‘ওই পোহাইল তিমির রাতি’ ‘বল ভাই মাভৈ মাভৈ’, ‘কারার ওই লৌহ কপাট,’ ‘এই শিকল পরা ছল’ ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ ‘ব্যারিকেড বেয়োনেট বেড়াজাল’ ‘ওরে বিষম দইরার ঢেউ, ‘বিপ্লবেরই রক্তে রাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে’, ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’ ‘জাগো জাগো প্রদীপ নিভিয়ে দাও, গানগুলো গাইতে আমাদের যেমন ভালো লাগত, তেমনি শ্রোতারাও খুব পছন্দ করত গানগুলো।’

এসবের পাশাপাশি বাঙালির বেদনাগাথা সঙ্গীতের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন অনেক মহান শিল্পী। স্বাধীনতাযুদ্ধের অনুকূলে সঙ্গীতে প্রতিরোধের আসর বসেছিল লন্ডনের অ্যালবার্ট হলে, বার্লিনের আলেকজান্ডার প্লাজায়। বিশ্বখ্যাত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার অংশ নিয়েছেন কনসার্টে। শিল্পী জর্জ হ্যারিসন ভারতের বিখ্যাত সেতার শিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্করের অনুরোধে আয়োজন করেন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ কনসার্ট। এই আসরে যোগ দেন স্পেনের রিংগো স্টার ও লিওন রাসেল, বিখ্যাত পপ গায়ক বব ডিলান, যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের গায়িকা জোয়ান ব্যাজ, শিল্পী এরিক ক্ল্যাপটন, ভারতের সেতার শিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর, সরোদ শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খান ও তবলা শিল্পী আল্লারাখা। এতে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও ওস্তাদ আলী আকবর খান বাজিয়েছিলেন, যুগলবন্দি ‘বাংলাদেশ ধুন’, বব ডিলান পরিবেশন করেন ছয়টি গান, জোয়ান ব্যাজ নিজের রচিত গানে সুরারোপ করে গাইলেন হৃদয় নিঙরানো গান। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ/ অস্তগামী মুখের শেষ রেশ/লক্ষ মানুষ নিহত, এই তো বাংলাদেশ।’

জর্জ হ্যারিসনের ‘দু’চোখে দুঃখ নিয়ে বন্ধু এলো/ কাঁদে সাহায্য চাই, দেশ বুঝি যায় ভেসে/ যদিও অনুভব করতে পারি নাই তার দুঃখ/ তবু জানতাম আমার কাছে প্রয়াসের প্রয়োজন।’ গানটিতে আবেগাপ্লুত হয়েছিল বিবেক সম্পন্ন মানুষ। জাপানের তাকামামা সুজুকি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে জর্জ হ্যারিসনের গান শুনিয়ে সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ। মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল সঙ্গীত। সঙ্গীতের বাণী আর সুর মুক্তিসেনাদের মনে যুগিয়েছে সাহস এবং শক্তি। জাগরণের গান অবরুদ্ধ দেশবাসীকে দেখিয়েছে বিজয়ের স্বপ্ন। সঙ্গীত চেতনায় মরনপন লড়াই করেছে বাঙলার দামাল ছেলেরা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পুবের আকাশে উদিত হয় নতূন দিনের সূর্য। নব আলোয় উদ্ভাসিত হয় আরেকটি মানচিত্র। আকাশে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা। নতুন এই মানচিত্র অর্জনে শব্দ সৈনিকরা যে ভূমিকা পালন করেন তা আমাদের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়।