ইতিহাস ঐতিহ্যে মৌলভীবাজার

ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৌলভীবাজারে রয়েছে জন-জাতির এক অনন্য সংমিশ্রণ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় উদাহরণ এ জেলার মানুষ। হিন্দু-মুসলমানের পাশাপাশি এখানে জনবৈচিত্র লক্ষ্য করার মত। খাসিয়া-মণিপুরী-হালামসহ চা-বাগানে রয়েছে বহু প্রান্তিক সমাজের লোক। শব্দকর সমাজও উল্লেখ করার মত।

বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব এই জেলার মমতারসে সিক্ত হয়ে দেশে-বিদেশে মৌলভীবাজারের মুখোজ্জ্বল করেছেন। দেশ পরিচালনায় এ জেলার বহু কৃতিপুরুষ সরকারি উচ্চপদে আসীন ছিলেন এবং আছেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও মৌলভীবাজারের তৎকালীন জনগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন। কামারূপ রাজ্য ছিল কুরুপাণ্ডবদের রাজ্যের অধীন। মৌলভীবাজারে দক্ষিণ পশ্চিমাংশের ‘দিনারপুর পরগনা’ কামরূপ রাজ্যের আওতাধিন ছিল। রাজ্যের রাজা ভগদত্ত কৌরবদের পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এতে করে হাজার বছর থেকে মৌলভীবাজারে সভ্য মানুষের বসবাস ছিল বলে স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যায়। বৈদিক যুগে কমলগঞ্জে হুমেরজানে যজ্ঞ হয়েছিল।

মৌলভীবাজারের জনমানুষের দ্রোহী চেতনার স্ফুরণ সিলেটের সাথে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বাঁধা। মৌলভীবাজার কখনও বাংলা, আবার কখনওবা আসামের সাথে সংযুক্ত ও বিযুক্ত হয়। জেলার লংলা-আদমপুর এলাকায় এক সময় ত্রিপুরা রাজ্যের আধিপত্য ছিল।

সামন্ত যুগে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সচেতন ছিল না। রাজনীতি সীমাবদ্ধ ছিল রাজা ও রাজদরবার সংশ্লি-ষ্টদের মাঝে। সিংহাসন আরোহন বা হারানোতে বাহুবল ছিল মুখ্য। যার যত বেশি সৈন্য শক্তি ও যে যত বেশি রণকৌশলে পারঙ্গম ছিল সেই হতো সিংহাসনের অধিকর্তা।

প্রাক-ইংরেজ আমলে মৌলভীবাজারের সবচে’ উলে¬খযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রাজা সুবিদনারায়ণ ও পাঠান বীর খাজা ওসমান’র যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাজা সুবিদনারায়ণ পরাজিত হয়েছিলেন। মোঘল-পাঠানদের আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে পরবর্তীতে ওসমান পরাজিত ও নিহত হন এবং মোগলদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে পতন ঊষার এলাকায় যুদ্ধ হয়েছিল।

ব্রিটিশের আইন মৌলভীবাজারবাসী মেনে নেয়নি। ১৮৫৭ সালে সিপাহী যুদ্ধে তারা সাহায্য করেছেন। সিপাহী বিদ্রোহের সাথে সংশ্লি¬ষ্ট অনেক সৈনিক পৃথ্বিমপাশার প্রখ্যাত জমিদার গৌছ আলীর আনুকূল্য লাভ করেছিলেন। এজন্য তাঁকে ইংরেজদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল। বিদ্রোহীদের আসার খবর সিলেটে অবস্থানরত ইংরেজ মেজরের কাছে পৌঁছলে তিনি সৈন্য নিয়ে বড়লেখা অভিমুখে যাত্রা করেন। লাতুতে ইংরেজ ও বিদ্রোহী সিপাহীদের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। এতে ইংরেজি সেনাপতি মেজর বিং ও ৫ সৈন্য প্রাণ হারায়।

পরবর্তীকালে ওয়াহাবী, ফরায়জি ও খেলাফত আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগে মৌলভীবাজারে। ১৯০৫ সালের স্বদেশী আন্দোলনে ভারত জুড়ে সৃষ্টি হয় নবজাগরণের। দিনে দিনে আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। মৌলভীবাজারের খদ্দরের কাপড়ের প্রচলন ঘটে।

১৯২১ সালে মৌলভীবাজারে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিকগণের মতে, সে সময়ই মৌলভীবাজারের সবচে’ বড় জন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। শহরের পশ্চিমাংশের বড়হাট এলাকার যুগিডহরে প্রাদেশিক খেলাফত কনফারেন্স বরণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯২৫ সালে রঙ্গিরকূল আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয় জীবনত্যাগী কংগ্রেসী নেতা-কর্মীর বদৌলতে। বিপ্ল-ববাদে মৌলভীবাজারের অবদানও কম নয়। শ্রীমঙ্গলের ফণীন্দ্রনাথ দত্ত (পাণিণি দত্ত) ভারত বিখ্যাত ছিলেন। রাজনগরে বহু বিপ্ল¬বী ছিলেন। লীলা নাগ তাদেরই ফসল। খেলাফত আন্দোলনে সিংকাপনীর কথা সকলের জানা।

ত্রিশের দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় ‘ভানুবিল বিদ্রোহ’ একটি উলে¬খযোগ্য ঘটনা। কমলগঞ্জের ভানুবিলের প্রজারা জমিদারদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনী প্রেরণ করে ইংরেজ সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সচেষ্ট হয়।

ঊনিশ শতকের শেষ দিকে বড়লেখা থানার একটি অংশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠে। ইতিহাসে ‘নানকার বিদ্রোহ’ নামে এই আন্দোলনটি পরিচিত। অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রজাদের বিদ্রোহের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন প্রখ্যাত কৃষক নেতা লালমোহন রায়। এই আন্দোলন তীব্রতর হলে অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা তা দমনে সচেষ্ট হলেও পরবর্তীতে এই আন্দোলনের সাফল্য অর্জিত হয় জমিদারী উচ্ছেদ আইন পাস হওয়ার মাধ্যমে। কংগ্রেস, অসহযোগ, স্বদেশী, মুসলিম লীগ খেলাফত আন্দোলনের পাশাপাশি বিপ্ল¬বী আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছে দিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। বিপ্লববাদ আন্দোলনে এই অঞ্চলের দুটি ঘটনা ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে।

প্রথম : জগৎসী গ্রামের ‘দোল গোবিন্দ’ আশ্রমে ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলি। এই আশ্রমে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চলতো বিপ্ল¬ববাদীদের কার্যক্রম। প্রথমদিকে তা ইংরেজরা বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে স্থানীয় দালাল মারফত এখানকার কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হয়। এসময় সৈন্যদের সাথে আশ্রমের বিপ্ল¬বীদের সংঘর্ষ বাধে। সৈন্যরা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ইংরেজ সৈন্যদের নেতৃত্বে একদল গুর্খা সৈন্য প্রেরণ করা হয়। আকষ্মিক অভিযান ও অস্ত্রশস্ত্র কম থাকায় বিপ্ল¬বীরা সংঘর্ষে পরাজিত হন এবং আশ্রম দখল করে নেয় ব্রিটিশ সৈন্য। এই সংঘর্ষে প্রাণ হারান মহেন্দ্রনাথ দেবসহ কয়েকজন। ঘটনাটি ঘটে ১৯১২ সালে।

দ্বিতীয় : ১৯১৩ সালে এ ঘটনার বদলা নিতে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট গর্ডনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিপ্ল-বীরা। কিন্তু এই পরিকল্পনা নিজেদের ভুলে ভণ্ডুল হয়ে যায়। হামলার পূর্বে বিপ্ল¬বী যোগেন্দ্র হুচট খেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট’র বাংলোতে পড়ে যান। ফলে তাঁর হাতে থাকা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর।

২.
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক বাংলার মসনদ আরোহনের পর বর্তমান মৌলভীবাজারসহ সমগ্র সিলেট জেলা সুবে বাংলার অধীনে একটি জেলা হিসেবে শাসিত হয়। সে সময় জেলার সর্বময় কর্তা ছিলেন ফৌজদার। নবাবী আমল ও ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে রাজস্ব আদায়ের জন্য সিলেট জেলাকে ১০ ভাগে বিভক্ত করা হয়। জেলার রাজনগর ও হিঙ্গাজিয়া তারমধ্যে অন্যতম।

ব্যবসা বাণিজ্যেও মৌলভীবাজারের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। সদর থানার পশ্চিমাঞ্চল এক সময় সাগর বা হ্রদের মোহনা ছিল। শাহবন্দর থেকে দিনারপুরের সদরঘাট হয়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় নৌকা ও জাহাজের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হতো বলে বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে উল্লে¬খ রয়েছে। কুশিয়ারা নদী থেকে বিভিন্ন সময় যুদ্ধের নৌবহর মনু নদী দিয়ে অতিক্রম করে ছিল বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। জনবসতি গড়ে ওঠায় সেই চিত্র বদলে গেছে। মৌলভীবাজারের শেষপ্রান্ত ইন্দেশ্বরে ঐতিহাসিককালে নৌ-বন্দর ছিল। মৌলভীবাজারে শীতল পাটি ঢাকাই মসলিনের মত বিশ্বখ্যাত ছিল একসময়। তবে এখন আর সেই সুদিন নেই। শীতল পাটি তৈরির সাথে জড়িত অনেক শিল্পী এ পেশা ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হয়েছেন। রাজনগরের লৌহ শিল্প বাংলা বিখ্যাত ছিল। বড় বড় কামান তৈরির সাথে জনার্দন কর্মকারের নাম আছে। পরবর্তীকালে চা ব্যবসায় মৌলভীবাজারে সারদা শ্যামের নাম যুক্ত হয়।

৩.
১৮৬৭ সালে সিলেট জেলাকে চারটি মহকুমায় বিভক্ত করার গেজেট প্রকাশ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয় ১৮৭৭ সালে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট সদর ও করিমগঞ্জ নামে ৪টি মহকুমায় জেলাকে বিভক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আয়তনে বড় হবার কারণে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৮৮২ সালে উত্তর শ্রীহট্ট ও দক্ষিণ শ্রীহট্ট নামে দুটি মহকুমায় সিলেট সদর মহকুমাকে বিভক্ত করা হয়। ১৮৮২ সালের ১এপ্রিল হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফার ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত সৈয়দ ইয়াছিন (রঃ) এর অধঃস্তন পুরুষ মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্ল¬াহ মুন্সিফের প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজারকে কেন্দ্র করে ২৬টি পরগণা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা নামে একটি মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ সালে সাউথ সিলেট বা দক্ষিণ শ্রীহট্ট নামের বদলে এই মহকুমার নাম মৌলভীবাজার রাখা হয়। মহকুমাটি প্রতিষ্ঠাকালে যে ২৬টি পরগনা এর অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল সেগুলোর নাম, তালুক সংখ্যা ও গ্রামের সংখ্যা এখানে উল্লেখ করা হল-

এই পরগণাগুলো ছাড়াও ১৯৪০ সালের ২৮ মে করিমগঞ্জের জলঢুপ থানাকে বিভক্ত করে ৭টি পরগণা নিয়ে বড়লেখা থানা গঠন করা হয়। ১৯৪৭ সালে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় থানাটিকে। যে সকল পরগণা নিয়ে নূতন থানাটি গঠিত হয় সেগুলো হচ্ছে- পাথারিয়া, ছোটলেখা, বড়লেখা, দক্ষিণ ভাগ, শাহবাজপুর ও বাহাদুরপুর ও পঞ্চখণ্ড পরগণার অর্ধেকাংশ।

১৮৮২ সালে মহকুমা গঠন করার পর সরাসরি জেলা কালেক্টরগণের অধীনে মহকুমা শাসিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ থেকে ১৯১২ ইংরেজী পর্যন্ত জেলা কালেক্টরগণের অধীনে এসিস্ট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা মহকুমার শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯১২ ইংরেজি থেকে মহকুমার অধিকর্তা হন মহকুমা প্রশাসক বা ঝ.উ.ঙ.। মৌলভীবাজার মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন মিঃ ইবি শার্প আইসিএস। ১৯১২ ইংরেজির ১০ জানুয়ারি এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে থানা প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়। মোট ৭টি উপজেলা বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত আছে। বর্তমানে জেলার আয়তন ১০৬৪ বর্গমাইল। জেলায় ৪টি পৌরসভা রয়েছে।

৪.
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে সিলেট-পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার পক্ষে রায় দেন জনগণ। যদিও ভোট নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। একই সালে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববঙ্গের সাথে নানান বৈষম্যমুলক আচরণ শুরু হয়। এই পর্যায়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হলে মৌলভীবাজারবাসীও ভাষা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। স্থানীয় শিশুপার্কে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা।

৫৪ সালে নির্বাচনে মৌলভীবাজারে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীদের জয় হয়। এরপর আসে ৭০ সালের নির্বাচন। সত্তর সালের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সব চাইতে উল্লে¬খযোগ্য ঘটনা। তখন এম.এন.এ নির্বাচিত হন মোঃ ইলিয়াছ, ব্যারিস্টার আব্দুল মুক্তাকিম চৌধুরী, এ.কে লতিফুর রহমান চৌধুরী। এমপিএ পদে জয়লাভ করেন আজিজুর রহমান, তোয়াবুর রহিম, নবাবজাদা আলী ছরোয়ার খান, তৈমুছ আলী এবং আলতাফুর রহমান। অসহযোগ আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন মৌলভীবাজারবাসী। মহকুমা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন আজিজুর রহমান। সর্বত্র শুরু হয় দুর্বার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এখানকার অগণিত মানুষ আত্মাহুতি দেয় স্বাধীনতার বেদীমূলে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মৌলভীবাজার।

৫৪ সালে নির্বাচনে মৌলভীবাজারে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীদের জয় হয়। এরপর আসে ৭০ সালের নির্বাচন। সত্তর সালের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সব চাইতে উল্লে¬খযোগ্য ঘটনা। তখন এম.এন.এ নির্বাচিত হন মোঃ ইলিয়াছ, ব্যারিস্টার আব্দুল মুক্তাকিম চৌধুরী, এ.কে লতিফুর রহমান চৌধুরী। এমপিএ পদে জয়লাভ করেন আজিজুর রহমান, তোয়াবুর রহিম, নবাবজাদা আলী ছরোয়ার খান, তৈমুছ আলী এবং আলতাফুর রহমান। অসহযোগ আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন মৌলভীবাজারবাসী। মহকুমা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন আজিজুর রহমান। সর্বত্র শুরু হয় দুর্বার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এখানকার অগণিত মানুষ আত্মাহুতি দেয় স্বাধীনতার বেদীমূলে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মৌলভীবাজার।

শেষ
সাহিত্য ও সংবাদপত্রের ইতিহাসেও মৌলভীবাজারের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার জনমানসে সংস্কৃতি চর্চার আবহ ছিল। পদ্মপুরাণ রচয়িতা ষষ্ঠীবর দত্তের বাড়ি রাজনগর উপজেলায়। আধুনিককালের লেখক হিসেবে যাঁর নাম উচ্চারিত হয় সর্বাগ্রে সেই সৈয়দ মুজতবা আলীও জন্মগ্রহণ করেছেন এই জেলায়। জেলার কবিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন-রাজনগরের মৃণালকান্তি দাসগুপ্ত। সাহিত্যক্ষেত্রে গল্পলেখক মীর্যা আব্দুল হাই’র নামও উলে¬খযোগ্য। সাধক কবি সৈয়দ শাহনূরের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন মৌলভীবাজারে। ১৮৩৯ সনে পাঁচগাঁও এর গৌরীশঙ্কর ভট্টচার্য ‘সম্বাদ ভাস্কর’ পত্রিকাটি কলিকাতা থেকে প্রকাশ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক মোহাম্মদীর বেশকিছু কাল পূর্বেই মৌলভীবাজার থেকে মাওলানা সৈয়দ আব্দুল বারী কুইসারী সম্পাদিত মাসিক ‘তবলিগুল ইসলাম ও তানজিমুল মুছলিমীন’ নামক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ‘আল জালালের’ সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী আসামের কোন সাহিত্য ও সংবাদপত্র মাসিকের প্রথম মুসলমান সম্পাদক ছিলেন। জগৎসীর মহেন্দ্রনাথ দে ১৯০৯ সালে ‘মৈত্রী’ ও ‘প্রজাশক্তি’ নামে দুটি পত্রিকা বের করেছিলেন। সাংবাদিক এস.এম আলী মৌলভীবাজারের সৈয়দ মোস্তফা আলী পুত্র। প্রখ্যাত লোক সাহিত্যিক আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন ও চৌধুরী গোলাম আকবরও এই মৌলভীবাজার জেলার লোক। তাছাড়া উলে¬খযোগ্য সাংবাদিক ছিলেন নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী, হিমাংশু শেখর ধর।