
অপূর্ব শর্মা ১৯৭৯ সালের পহেলা মার্চ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিনাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম অতূল চন্দ্র শর্মা, মাতার নাম রাধা রাণী শর্মা। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়েই ১৯৯৮ সালে যুক্ত হন সাংবাদিকতার সাথে। মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পাতাকুড়ির দেশ পত্রিকার আঞ্চলিক সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। একই সময়ে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হন শ্রীমঙ্গল থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘খোলাচিঠি’ পত্রিকার সাথে।
১৯৯৯ সালের শেষদিকে জাতীয় দৈনিক ‘প্রভাত বেলা’র শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যোগ দেন শ্রীমঙ্গল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘শ্রীভূমি’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে। পাশাপাশি সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘বার্তাবাহক’ পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন প্রায় এক বছর। দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকা বের হলে এর শুরু থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত পালন করেন শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধির দায়িত্ব।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় লেখালেখির সাথেও সম্পৃক্ত হন তিনি। তাঁর লেখা প্রথম কবিতা ‘স্বপ্ন’ ১৯৯৮ সালে মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মনুবার্তা পত্রিকায় বের হয়। আর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ বার্ষিকী ‘নিসর্গ’-তে। অপুর চিঠি নামের সেই গল্প ব্যাপক প্রশংসিত হয় ছাত্র-শিক্ষক মহলে। তাছাড়া কলেজের দেয়াল পত্রিকায় ‘বাধাহীন গতি’ কবিতাটি তাঁর নামের সাথে কবি অভিধাটি যুক্ত করে। স্বপ্ন ছিলো কবি হবেন।
কিন্তু ২০০১ সালের পহেলা আগস্ট সিলেট থেকে প্রকাশিত প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক ‘যুগভেরী’তে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করলে তাতে যেনো ছন্দপতন ঘটে। চা বাগানের নৈসর্গিক শোভার শহর ছেড়ে তিনি চলে আসেন পর্যটন নগরীতে। তবে কাব্যচর্চায় ছন্দপতন ঘটলেও একদিকে লেখালেখি, অন্যদিকে চলতে থাকে সাংবাদিকতা।
দৈনিক যুগভেরীতে চীফ রিপোর্টার এবং বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শুধু আঞ্চলিক সংবাদপত্রেই নয়, একাধিক জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন অপূর্ব শর্মা।
২০০৩ সালে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। এর পরের বছর দৈনিক ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আজকের কাগজের সিলেট অফিসের ব্যুরো চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ, সাপ্তাহিক ২০০০-এর বিভাগীয় প্রতিনিধি এবং নিউজ বাংলাদেশ ডটকমের ব্যুরো চীফের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সাথে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও সোচ্চার রয়েছে অপূর্ব শর্মার কলম। ২০০৯ সালে সিলেট অঞ্চলের রাজাকারদের খুজে বের করে দৈনিক যুগভেরীতে ধারাবাহিকভাবে লিখেন ‘তুই রাজাকার’ সিরিজ। এতে সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা অনেক যুদ্ধপারাধীর স্বরূপ উন্মোচিত হয়। এরপর থেকে অনেকটা ধারাবাহিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ছাইচাপা পড়ে থাকা ইতিহাস অনুসন্ধান করে চলেছেন তিনি।
সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতায় তাঁকে পথিকৃত বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেই। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রিপোর্ট ও প্রতিবেদনের সংখ্যা দুই শতাধিক। শুধুমাত্র দৈনিক যুগভেরী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সাড়া জাগানো শতাধিক প্রতিবেদন।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলো হচ্ছে, ‘জগৎজ্যোতি’, ‘বীরাঙ্গনাদের কথা’, ‘মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের নারী’, ‘অস্তিত্ব সংকটে বধ্যভূমি’, ‘ওরা ফিরে আসেনি’, ‘সিলেটে যুদ্ধাপরাধ’, ‘চা বাগানে গণহত্যা’, ‘মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া মুখ’।
২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদন গ্রন্থে তাঁর ১৫ টি প্রতিবেদন সংযুক্ত হয়েছে। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিক হিসেবে অপূর্ব শর্মা যতটা পরিচিত ঠিক ততটাই তিনি লেখক হিসেবে পরিচিত। জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখালেখি করলেও নিয়মিত লিখছেন দৈনিক জনকন্ঠ ও সাহিত্য পত্রিকা শব্দঘরে। তাঁর লেখা শতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে ক’জন গবেষক গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন অপূর্ব শর্মা তাদের মধ্যে অন্যতম। এ পর্যন্ত তার লেখা ১৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ৮টি।

তার লেখা গ্রন্থগুলো হচ্ছে, ১. অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি (বইমেলা ২০০৯), সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২. সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র (বইমেলা ২০১০) ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ, ঢাকা, ৩. বিপ্লবী অসিত ভট্টাচার্য (বইমেলা ২০১০) ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ, ঢাকা, ৪. মুক্তিপথের অভিযাত্রী আমীনূর রশীদ চৌধূরী (বইমেলা ২০১১) সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ৫. অভিজাত গণতন্ত্রী আব্দুর রশীদ চৌধুরী (বইমেলা ২০১১) সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ৬. বীরাঙ্গনা-কথা (বইমেলা ২০১৩) সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ৭. মুক্তিযুদ্ধের এক অসমাপ্ত অধ্যায়: ফিরে আসেনি ওরা (বইমেলা ২০১৩), গদ্যপদ্য, ঢাকা, ৮. মুক্তিসংগ্রামে নারী (বইমেলা ২০১৪), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ৯. সাহিত্য সংস্কৃতি ও অন্যান্য (বইমেলা ২০১৬) হাওর প্রকাশন, সিলেট, ১০. মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর (বইমেলা ২০১৬), নাগরী প্রকাশন, সিলেট, ১১. সুরশব্দের ধ্রুবতারা (বইমেলা ২০১৬), হাওর প্রকাশন, সিলেট, ১২. চা-বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১ (বইমেলা ২০১৬), সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ১৩. মুক্তিযুদ্ধে সিলেট জেলা, (বইমেলা ২০১৭), তাম্রলিপি, ঢাকা।
এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে তাঁর লেখা ৩টি গ্রন্থ অনুবাদ হয়েছে। অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি এবং চা-বাগানে গণহত্যা গ্রন্থেও অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন রবীন্দ্র গবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরী এবং মুক্তিপথের অভিযাত্রী, আমিনূর রশীদ চৌধূরী গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন ফাহমীনা রশীদ চৌধুরী। এই তিনটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হবে আগামী বইমেলায়।
সাংবাদিকতা, লেখালেখি ও গবেষণার পাশাপাশি সম্পাদনায়ও সিদ্ধহস্ত তিনি। শুরুটা হয়েছিলো, ১৯৯৯ সালে। দুর্নীতি দমন সম্মিলিত ছাত্র সংগঠনের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে প্রকাশিত স্মারক ‘স্মৃতি পটে আঁকা’ যৌথভাবে সম্পাদনা করেন তিনি। এটিই ছিলো তাঁর প্রথম সম্পাদনা।
এরপর ২০০২-২০০৪ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা অন্যধারা সম্পদনা করেন। ২০০৫-২০০৬ সালে সম্পাদনা করেন শরৎনন্দিনী এবং মহালয়া স্মারক।

সুহাসিনী দাস, নাগরিক শোকসভা-স্মারক, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, ২০০৯ (যৌথ), বাউল সম্রাট, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, বইমেলা ২০১০, সিরাজুন্নেসা চৌধুরী, জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ ২০১০ (যৌথ), মনীষাজ্যোতি, প্রজ্ঞাদীপ মুহিতমানস: অন্তরঙ্গপাঠ স্মারক মদনমোহন কলেজ সাহিত্যপরিষদ ২০১৬ (যৌথ), সুবর্ণিল কাব্যরেখা, কবি একে শেরামের কবিতা-যাপনের পঞ্চাশপূর্তি স্মারক ২০১৭, ছন্দলয়ের ঝলকানি, অণিল কিষণ সিংহ ৮০পূর্তি স্মারক ২০১৭, নৃপেন্দ্রলাল দাশের কবিতা, বিচার ও বন্দিশ, হাওর প্রকাশন, এপ্রিল ২০১৯, নৃত্যছন্দে বিশ্ববীনা, এপার বাংলা-ওপার বাংলা নৃত্যোৎসব স্মারক ২০১৯, ছান্দসিক, আন্তর্জাতিক বাংলা আবৃত্তি স্মারক ২০১৯ (যৌথ) সম্পাদনায় প্রতিভাত হয়েছে অপূর্ব শর্মার দক্ষতা। তাঁর সম্পাদনায় লক্ষ্য করা যায় মুন্সিয়ানার ছাপ।
প্রকাশিতব্য সিলেট জেলা গেজিটিয়ারেরও অন্যতম সম্পাদক তিনি। প্রবন্ধগ্রন্থ, স্মারকগ্রন্থ, সন্মাননাগ্রন্থ মিলিয়ে এ পর্যন্ত তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬। বর্তমানে দৈনিক যুগভেরী এবং সাহিত্য পত্রিকা ‘অভিমত’ সম্পাদনা আর লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।
অপূর্ব শর্মার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ‘অপূর্ব শর্মার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা : প্রান্তজনের কথা’ শিরোনামে- সেমিনার আয়োজন করে। ‘অপূর্ব শর্মার জীবন কথা ও কর্ম পরিচয়’, ‘অপূর্ব শর্মার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা’ এবং ‘অপূর্ব শর্মার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় প্রান্তিক মানুষ’- এই তিন অধ্যায়ে বিন্যস্ত ছিলো সেমিনারটি। যৌথভাবে সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন প্রিয়াংকা বনিক, সাবরিনা আহমদ, আফসানা শারমিন ও সাহেদ আহমদ। সেমিনারের তত্ত্ববধায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন।
একই বছরের ১৭ মে তাঁর বিপুল প্রশংসিত চা-বাগানে গণহত্যা ১৯৭১ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে মদনমোহন কলেজ সাহিত্য পরিষদ ‘সবুজের রক্তগাথা’ নামে একটি প্রকাশনা স্মারক বের করে। স্মারকটি সম্পাদনা করেছেন মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরিচালক (অর্থ) ও রবীন্দ্র গবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরী। এই গ্রন্থে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কামাল লোহানী, ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রবীন শিক্ষাবিদ লেখক, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মো. আবদুল আজিজ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক লেখক-গবেষক অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা, কবি ও গবেষক অধ্যাপক নৃপেন্দ্রলাল দাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ড. সেলু বাসিত, সাবেক উপসচিব লেখক-গবেষক ড. শেখ ফজলে এলাহীসহ ১৮ জন লেখক মূল্যায়ন করেছেন অপূর্ব শর্মার কাজ।

২০১৮ সালে তাঁর লেখা ও গবেষণা থেকে আবৃত্তি ও পাঠের একক অনুষ্ঠান বীরাঙ্গনা কথার আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি। এই সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেটের কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে তাঁর লেখা থেকে আবেগঘন উপস্থাপনায় দর্শকদের আপ্লুত করেন প্রবাসে বাংলার মুখ খ্যাত জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন। এর আগে একই সালের ১৬ নভেম্বর মুনিরা পারভীনের নির্দেশনায় লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে মঞ্চস্থ হয় বীরাঙ্গনা দ্যা ওয়ার হেরোইন ১৯৭১। এতে অপূর্ব শর্মার প্রভারাণী ও সাফিয়ার আখ্যানের নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দেন মুনিরা। যা বাঙালি কমিউনিটিতে বিপুল প্রশংসিত হয়।
এছাড়াও এই বাচিক শিল্পী প্রায় নিয়মিতই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা কথা গ্রন্থ থেকে পাঠ ও আবৃত্তি করে অপূর্ব শর্মার লেখা যুদ্ধআখ্যান প্রবাসের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সর্বশেষ তাঁর লেখা বীরাঙ্গনা কথা গ্রন্থটি নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জার্নালে। বীক্ষার চলতি সংখ্যায় ‘অপূর্ব শর্মার বীরাঙ্গনা কথা মুক্তিযুদ্ধে নারীর অশ্রুত আখ্যান শীর্ষক প্রবন্ধটি লিখেছেন গবেষক আজির উদ্দিন।
সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও পিছিয়ে নেই তিনি। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন অপূর্ব শর্মা। জন্মভূমি থেকেই শুরু হয়েছিলো তাঁর সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা। প্রথমবারের মতো সাংগঠনিক তৎপরতার সাথে যুক্ত হন ১৯৯৮ সালে। এই সালে দূর্নীতি প্রতিরোধ সংঘ, সাতগাঁও, শ্রীমঙ্গলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোনীত হন তিনি। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত পালন করেন আদর্শ সঙ্গীত বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব।
২০০৩ সালে লাভ করেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্য পদ। একই সময়ে যুক্ত হন সিলেট রির্পোর্টাস ইউনিটির সাথে। বর্তমানে সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। জীবন সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত আছেন, মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরী, মৌলভীবাজার সমিতি, সিলেট এবং ডায়াবেটিক সমিতি সিলেটের সাথে।
সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত রয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কবি দিলওয়ার পরিষদ এবং মহি উদ্দিন শীরু স্মৃতি সংসদের সাথে। সাংস্কৃতিক সংগঠন হাওরপারের ধামাইল উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোক ভাবনা বিষয়ক ছোট কাগজ ঈশানের গাংচিল এবং বাউলা অন্তরের উপদেষ্টা সম্পাদক তিনি। যুক্ত রয়েছেন কবিতা পরিষদ সিলেটের সাথে। বর্তমানে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন আবৃত্তি সংগঠন ছান্দসিক এর সাথে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই আবৃত্তি সংগঠনের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

শুধু দেশেই নয়, প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও তিনি সমানভাবে সামাদৃত। লন্ডনের সাপ্তাহিক জনমত, আমেরিকার প্রথম আলো, কানাডার আশ্রম এবং ভারতের বিভিন্ন সাময়িকীতে নিয়মিত লিখে চলেছেন তিনি। যা একজন লেখক হিসেবে অপূর্ব শর্মাকে আসীন করেছে অনন্য উচ্চতায়।
সাংবাদিকতা এবং গবেষণা উভয় ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলা অপূর্ব শর্মা স্বীকৃতিও পেয়েছেন দুটি ক্ষেত্রেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায় ২০১০ সালে তিনি লাভ করেছেন এইচএসবিসি কালি ও কলম তরুণ লেখক পুরস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিকতায় ২০১৩ সালে দেশসেরা প্রতিবেদক হিসেবে অর্জন করেছেন বজলুর রহমান স্মৃতিপদক।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৫ সালে সিলেট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্মাননা, ২০১৭ সালে ভারতের কলকাতার ভ্রমরা সম্মাননা, ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় স্রোত সন্মাননা এবং শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সন্মাননা লাভ করেন তিনি। একই সালে সংগ্রামী নারীদের নিয়ে কাজ করায় সংবর্ধিত হন কলকাতায়। নারীবাদী সংগঠন আনন্দম ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁকে এই সংবর্ধনা প্রদান করে।
-দ্বোহা চৌধুরী।